Friday, May 23, 2025
No menu items!
Homeআন্তর্জাতিকচিংড়ি রপ্তানি: বাংলাদেশের সাদা সোনার গল্প

চিংড়ি রপ্তানি: বাংলাদেশের সাদা সোনার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চিংড়ি মাছ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নাম।দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ উপকূলজুড়ে বিস্তার লাভ করা এই শিল্প লাখো মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু খাবারের উপকরণ নয়, চিংড়ি আজ একটি রপ্তানিযোগ্য ব্র্যান্ড,যা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতি বহন করছে।

চিংড়ি রপ্তানির শুরুটা হয়েছিল গত শতকের সত্তরের দশকে। তখন বাংলাদেশের রপ্তানি নির্ভরতা প্রধানত ছিল পাট ও চামড়ার ওপর। কিন্তু আশির দশকে এসে বৈশ্বিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা বাড়তে থাকে আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশও ধীরে ধীরে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে শুরু করে। শুরুতে কেবল প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরিত চিংড়িই রপ্তানি হতো কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খামারভিত্তিক উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

বর্তমানে বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানি বাণিজ্য বিশ্ব বাজারে একটি সুপরিচিত নাম। যুক্তরাষ্ট্র,জাপান,ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর কয়েক হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয়। রপ্তানি আয়ের দিক থেকে এটি এখন দেশের প্রধান পাঁচটি কৃষিজ পণ্যের অন্যতম। তবে সম্প্রতি ইউরোপীয় বাজারে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের কারণে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততার বৃদ্ধি ও ভাইরাসজনিত রোগের কারণে খামারিরা নানা সংকটে পড়ছেন।

বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। একটি হলো‘বাগদা যা সাধারণত লবণাক্ত পানিতে চাষ হয়। অপরটি ‘গলদা, যা মিঠা পানির চিংড়ি। এই দুটি জাতই রপ্তানিতে ব্যবহৃত হয়, যদিও বাগদা তুলনামূলকভাবে বেশি রপ্তানি হয়। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রজনন কেন্দ্রের মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলমান রয়েছে।

ভবিষ্যতে চিংড়ি শিল্পে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হতে পারে যদি সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করে। আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জাত, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ওপর জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে দরকার পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি এবং ক্ষুদ্র খামারিদের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা।

চিংড়ি শিল্প গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক শক্তিশালী চালিকা শক্তি। সঠিক পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে চিংড়িকে ঘিরেই গড়ে উঠতে পারে একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ উপকূলীয় বাংলাদেশ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments