নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুইটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে মুহূর্তেই মুছে গিয়েছিল লাখো প্রাণ, শহর হয়ে উঠেছিল মৃত্যুর নগরী। তখন কেবল দুটি বোমাই বদলে দিয়েছিল ইতিহাসের গতিপথ। সেই ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে বিশ্ব যেন এখন আরও বড় ধরনের ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) ২০২৫ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানায়, বর্তমানে বিশ্বের ৯টি দেশের হাতে রয়েছে প্রায় ১২ হাজার ১২১টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। এর মধ্যে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দখলেই রয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। রাশিয়ার হাতে আছে প্রায় ৫৮৮৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে ৫২৪৪টি।
তালিকায় এরপর রয়েছে চীন, যাদের হাতে রয়েছে ৪১০টি ওয়ারহেড। ফ্রান্সের আছে ২৯০টি, যুক্তরাজ্যের ২২৫টি, পাকিস্তানের ১৭০টি, ভারতের ১৬৪টি এবং ইসরায়েলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না থাকলেও অনুমান করা হয় ৮০ থেকে ৯০টি বোমা রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ঘোরতর গোপনীয় হলেও অনুমান করা হয় ২০ থেকে ৩০টির মতো অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অস্ত্রের একটি বড় অংশই যুদ্ধ প্রস্তুত অবস্থায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র কিছুক্ষণের নোটিশেই ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। আর এটাই বর্তমান বিশ্ব নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা।
চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা খারাপ কিছু বয়ে আনতে পারে মানবজাতির জন্য।যুদ্ধ শুরু না হলেও, অস্ত্রগুলো যেন প্রতিদিনই এক অদৃশ্য চাপ হিসেবে কাজ করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক যুদ্ধ এখন আর কল্পনার বিষয় নয়। বরং একটি ভুল বোঝাবুঝি, প্রযুক্তিগত ত্রুটি কিংবা সাইবার হ্যাকিং যেকোনো কিছু থেকেই ঘটতে পারে মারাত্মক পরিণতি।
১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকির ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, পারমাণবিক বিস্ফোরণ কী ভয়াবহ মাত্রার মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। আর এখনকার পারমাণবিক বোমাগুলো সেই সময়ের তুলনায় বহু গুণ শক্তিশালী।
আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, বড় বড় দেশগুলো একে একে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে INF চুক্তি বাতিল করেছে। START চুক্তি নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। চীন, ভারত কিংবা পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নেই বললেই চলে।
প্রশ্ন উঠছে, যদি এতগুলো দেশ এই সর্বনাশা অস্ত্রের মালিক হয়, তবে পৃথিবী কতটা নিরাপদ? একটি দেশ ভুল করলেও পুরো মানবজাতিকে তার মাশুল দিতে হতে পারে।
বিশ্বের মানুষ কি সত্যিই চায় এমন এক অস্ত্রের অস্তিত্ব, যেটি প্রয়োগ না করেও প্রতিনিয়ত আতঙ্ক ছড়ায়? নাকি সময় এসেছে, যখন যুদ্ধ নয় বরং নিরস্ত্রীকরণই হবে সভ্যতার শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ?