১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার এবং এর সঙ্গে ছিল ২০ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আনুমানিক তিন থেকে পাঁচ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশই ঘুমন্ত অবস্থায় জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যান।
এই দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলা। বিশেষ করে ভোলার চরফ্যাশন ও তজুমদ্দিন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও গলাচিপা এবং নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচর এলাকায় প্রাণহানি ছিল সবচেয়ে বেশি। অনেক গ্রাম সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়, গবাদিপশু ও ফসল ধ্বংস হয় এবং বিশুদ্ধ পানির মারাত্মক সংকট দেখা দেয়।
আন্তর্জাতিক সাহায্য এলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই অপ্রতুল। তবে এই দুর্যোগের পর উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটে।
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় শুধু একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, এটি ছিল এক ভয়াবহ মানবিক ট্র্যাজেডি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল অমলিনভাবে রয়ে গেছে।