নিজস্ব প্রতিবেদকঃ একবিংশ শতাব্দীতে আইসক্রিম শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি আনন্দের প্রতীক আর গ্রীষ্মের অপরিহার্য সঙ্গী। কিন্তু এই ঠান্ডা মিষ্টির পেছনে রয়েছে শতাব্দী পেরিয়ে আসা এক চমকপ্রদ ইতিহাস।
আইসক্রিমের উৎপত্তি আজ থেকে প্রায় ২,০০০ বছর আগের চীন দেশে। তখনকার চীনারা দুধ ও চালের মিশ্রণকে বরফে জমিয়ে একধরনের হিমিত মিষ্টি তৈরি করত। এরপর পারস্যে ঠান্ডা শরবত তৈরি হতে থাকে বরফ ও গোলাপজল দিয়ে। তবে আধুনিক আইসক্রিমের গোড়াপত্তন হয় ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালিতে।
১৬শ শতকে ইতালির ক্যাথরিন দে মেডিসি যখন ফ্রান্সে বিবাহসূত্রে যান, তখন সঙ্গে নিয়ে যান আইসক্রিম প্রস্তুতকারক পাচকও। সেই থেকেই ফ্রান্সে আইসক্রিম জনপ্রিয় হতে শুরু করে। পরে এটি ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটেন ও আমেরিকায়। ১৭৪৪ সালে আমেরিকায় প্রথম আইসক্রিমের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়, আর ১৮৫১ সালে বাল্টিমোরে প্রথম বাণিজ্যিক আইসক্রিম ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠিত হয়।
আইসক্রিমে বিপ্লব আসে ১৯ শতকে হিমায়ন প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে। এরপর ২০ শতকের মাঝামাঝি আইসক্রিম হয়ে ওঠে আমেরিকান সংস্কৃতির অংশ,রাস্তায় রঙিন ভ্যান, নানা স্বাদের কন আর শিশুদের উচ্ছ্বাস মিলিয়ে এক রঙিন স্মৃতি হয়ে ওঠে।
বর্তমানে আইসক্রিমের বাজার বৈশ্বিকভাবে বিশাল। ভ্যানিলা, চকোলেট, স্ট্রবেরি ছাড়াও যোগ হয়েছে হাজারো নতুন স্বাদ ম্যাংগো, গ্রিন টি, কফি, পিচ, এমনকি গোলমরিচ বা গোলাপ ফুলের স্বাদেও তৈরি হচ্ছে আইসক্রিম।
বাংলাদেশেও আইসক্রিম শিল্প গত কয়েক দশকে অনেক এগিয়েছে। স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো যেমন পলার, আরং, ইগলু এবং বিদেশি কিছু ব্র্যান্ডের মধ্যেও প্রতিযোগিতা চলছে। এখন গ্রামে-গঞ্জেও হিমায়িত এই খাবার সহজলভ্য, যা এক সময় শুধু শহরের বিলাসিতা ছিল।
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য তৈরি হচ্ছে ডায়েট আইসক্রিম, সুগার ফ্রি আইসক্রিম। প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ঘরে বসেই আইসক্রিম বানানোর মেশিনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আইসক্রিম কেবল এক সময়ের বিলাসবহুল খাবার থেকে আজকের সহজলভ্য মজাদার অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে। ইতিহাসের পথে হাঁটতে হাঁটতে এই ঠান্ডা মিষ্টি জয় করে নিয়েছে কোটি মানুষের মন,এটি এখন শুধু খাবার নয়, এক রকম আবেগের নাম।