Friday, May 23, 2025
No menu items!
Homeশিক্ষাকুয়েটে বাড়ছে সেশনজট

কুয়েটে বাড়ছে সেশনজট

৭৪ দিনের অচলাবস্থার পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)–এ একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও, ক্লাসে ফিরেননি শিক্ষকরা।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন তারা। একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার তৃতীয় দিনেও ক্লাসে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের অনীহা মিলিয়ে পুরো ক্যাম্পাস এখনো প্রায় স্তব্ধ। সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, বাড়ছে সেশনজট, স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কার্যক্রমও।

অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলী চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করলেও এখনো কোনো কার্যকর সমাধান আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভুঞা এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তারও দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলেও অচলাবস্থা কাটেনি।

মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় কিছু শিক্ষার্থী কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। কিন্তু প্রশাসনের নিরবতায় শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ঘটনার দায়ীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা নেবেন না। এমনকি সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকেও বিরত থাকার হুমকি দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে দুই দফা প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছেন। শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম, মো. ওবায়দুল্লাহ, শেখ মুজাহিদ, গালিব রাহাত ও তৌফিক বলেন, তারা শিক্ষকদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করেন না এবং অনিচ্ছাকৃত কোনো আচরণে কষ্ট পেলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।

তারা চান, সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। তবে একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত সচল হওয়াও জরুরি, কারণ আগেই এক বছরের বেশি সেশনজটে ছিলেন তারা; সাম্প্রতিক অচলাবস্থায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষ হয় ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে, যাতে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন। সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে অজ্ঞাত ৪০০–৫০০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে প্রশাসন।

ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ২০ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন করে এবং উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে। এরপর ১৩ এপ্রিল হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং উপাচার্যের পদত্যাগের আলটিমেটাম দেয়।

২৪ ঘণ্টার সময়সীমা পেরিয়ে গেলে ২১ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসে।

১৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরে সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও হল খোলার সিদ্ধান্ত হয় এবং ঘোষণা আসে ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হবে।

তৃতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটি কুয়েট ক্যাম্পাসে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে।

অবশেষে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণের বার্তা পৌঁছানোর পর শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments