গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সংস্কার প্রস্তাব আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।
এ ছাড়া সংস্কার বাস্তবায়নবিষয়ক এ সভায় পাঁচটি সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য মোট ১২১টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩৮টি, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের ৪৩টি, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩টি প্রস্তাব আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।
এদিন সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব। এ ১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে আটটি অপেক্ষাকৃত সহজে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। এগুলো হলো মহাসড়কের পেট্রোল পাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন, মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা, কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা, গণশুনানি, তথ্য অধিকার আইন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন এবং ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবা।
সভায় দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য আটটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়, আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য আপলোড এবং নাগরিকদের মতামত প্রদানের অপশন রাখার বিষয়ে করণীয় ঠিক করে দেবে।
পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দুদিনের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ভেটিং সম্পন্ন করে তা ফেরত পাঠাবে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা জারি করবে। নীতিমালা জারির এক মাসের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে এক সপ্তাহের মধ্যে সভা করে কমিউনিটি স্বাস্থ্য পরিচালনার কৌশল নির্ধারণ করবে।
সভায় জানানো হয়, সব সরকারি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সব সেবা প্রদানকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে গণশুনানির কৌশল ঠিক করে দেবে। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’ হিসেবে রূপান্তরে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলমান সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে কমিশনের সুপারিশ সমন্বয় করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন করতে হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ বিষয়ে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
এ ছাড়া ডিজিটাল রূপান্তর সম্পন্ন করা এবং ই-গভর্নমেন্ট ও ই-সার্ভিস ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বর্তমান সরকার বাস্তবায়িত নাগরিক প্ল্যাটফর্মে সরকারের সব সেবা অন্তর্ভুক্ত করার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে অবহিত করবে।
সভায় জানানো হয়, বিগত মাসগুলোতে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ছোটবড় বহু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। মোট ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬১টি সংস্কার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।