Homeআন্তর্জাতিকটুইটার: একটি বিপ্লবী মাধ্যমের উত্থান, সম্ভাবনা ও সংকট

টুইটার: একটি বিপ্লবী মাধ্যমের উত্থান, সম্ভাবনা ও সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০০৬ সালে “টুইটার” নামের এক নতুন মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম যাত্রা শুরু করে। এর জন্ম দেন জ্যাক ডরসি, নোয়া গ্লাস, বিজ স্টোন ও এভান উইলিয়ামস। শুরুতে এটি ছিল একটি সাধারণ ‘স্ট্যাটাস আপডেট’ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ব্যবহারকারীরা ১৪০ অক্ষরের মধ্যে নিজেদের ভাব প্রকাশ করতেন। কিন্তু অল্প সময়েই এটি হয়ে ওঠে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক অনন্য নাম।

টুইটার জনপ্রিয় হয় মূলত তার সরলতা, গতিশীলতা ও রিয়েলটাইম আপডেটের কারণে। এটি হয়ে ওঠে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সেলিব্রেটি এবং সাধারণ মানুষের ভাবনা প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। “হ্যাশট্যাগ” নামের ধারণা সামাজিক আন্দোলন, প্রতিবাদ, সংহতি বা তথ্য আদান-প্রদানে এক যুগান্তকারী মোড় তৈরি করে।
আরব বসন্ত থেকে শুরু করে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার, #MeToo আন্দোলন পর্যন্ত,টুইটার ছিল সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টুইটারের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি এর নেতিবাচক দিকগুলোও প্রকাশ পেতে থাকে। ভুয়া খবর ছড়ানো, অপপ্রচার, ট্রলিং, ঘৃণামূলক বার্তা ও সাইবার বুলিংয়ের মতো সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে এই প্ল্যাটফর্ম। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপের অভিযোগও ওঠে।
২০২২ সালে টেসলা ও স্পেসএক্স এর কর্ণধার ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নেন। তার মালিকানার পর থেকে নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। সত্য-মিথ্যার যাচাই ছাড়াই “এক্সপ্রেশন অব ফ্রিডম” এর নামে যেকোনো কিছু ছড়াতে দেয়ার ফলে সমালোচনা শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। টুইটার-এর নামও বদলে গিয়ে হয়ে যায় “X”। অনেকে এই পরিবর্তনকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-ভিত্তিক কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্মের অংশ হিসেবে দেখলেও, অনেকেই মনে করেন এটি ছিল টুইটারের মৌলিক চরিত্র হারানোর সূচনা।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে টুইটার বা X শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি এক বিশাল ইনফরমেশন ওয়েপন,যার মাধ্যমে তথ্য যেমন দ্রুত ছড়ানো যায়, তেমনি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিও ভয়াবহভাবে প্রভাব ফেলতে পারে সমাজে।
টুইটার মানবজাতির ডিজিটাল ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। এটি যেমন বিশ্বকে সংযুক্ত করেছে, তেমনি আমাদের সামনে নতুন প্রশ্নও রেখেছে,তথ্যের স্বাধীনতা বনাম তথ্যের নিরাপত্তা।
ভবিষ্যতে এই প্ল্যাটফর্ম আমাদের সমাজকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা সময়ই বলবে। তবে ইতিহাসে টুইটার অবশ্যই একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments