নিজস্ব প্রতিবেদকঃ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ছাত্র মার্ক জুকারবার্গ বন্ধুদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের জন্য তৈরি করেন একটি ওয়েবসাইট The Facebook। তখন কেউ ভাবেনি, এই ছোট্ট উদ্যোগটি একসময় বদলে দেবে পৃথিবীর যোগাযোগব্যবস্থা। সময়ের সাথে সাথে এটি শুধু নাম নয়, হয়ে ওঠে সভ্যতার এক নিরবচ্ছিন্ন অংশ।
বিশ্বব্যাপী বর্তমানে তিনশ কোটিরও বেশি মানুষ এই মাধ্যম ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার দ্রুত গতিতে বেড়েছে।
ফেসবুকের উপকারিতা অপরিসীম। প্রবাসে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে কথোপকথন, পুরোনো বন্ধুদের খোঁজ পাওয়া,ব্লাড ডোনার যোগাড়,হারানো ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কিংবা নিজস্ব ভাবনা প্রকাশ সবই এখন সহজ। অনেকেই নিজের ক্ষুদ্র ব্যবসা গড়ে তুলেছেন শুধু ফেসবুক পেইজের ওপর ভর করে। একজন নারী উদ্যোক্তা ঘরে বসেই দেশজুড়ে পণ্য বিক্রি করছেন।যেন পুরো একটা ভার্চুয়াল সমাজ।
কিন্তু এই সুবিধার পাশাপাশি ফেসবুক হয়ে উঠেছে এক অদৃশ্য আসক্তির নাম। তরুণদের বড় একটি অংশ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছে স্ক্রলে স্ক্রলে, অথচ জীবনের বাস্তব কাজগুলো পড়ে থাকছে উপেক্ষিত। ফেসবুকে ভুয়া খবর, গুজব বা ভিত্তিহীন রাজনৈতিক প্রচার খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সাইবার বুলিং, ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য অপব্যবহার, হ্যাকারদের থাবা এসব সমস্যা যেন প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কেউ কেউ এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে।
এছাড়াও, ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ডেটা যেভাবে সংগ্রহ ও ব্যবহার করা হয়, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন আমরা নিজের অজান্তেই হয়ে উঠেছি একেকটি ‘ডিজিটাল প্রোডাক্ট’।
তবে এসব ঝুঁকি ও সমস্যার মধ্যেও, ফেসবুক একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপ্লবগুলোর একটি। এটি আমাদের কণ্ঠস্বর দিয়েছে, দিয়েছে একে অন্যের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ। এখন প্রয়োজন এই মাধ্যমটি ব্যবহারে সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি।
কারণ প্রযুক্তি নিজে ভালো বা খারাপ নয় ব্যবহারকারীর হাতেই নির্ধারিত হয়, তা সভ্যতাকে উন্নত করবে, না ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।