Homeজাতীয়রংপুরের পর্যটনে জাগরণ: ইতিহাস, প্রকৃতি আর সম্ভাবনার মিলন

রংপুরের পর্যটনে জাগরণ: ইতিহাস, প্রকৃতি আর সম্ভাবনার মিলন

  • নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের উত্তরের শহর রংপুর, শুধু রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, বরং এক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার। অথচ এতদিন পর্যন্ত পর্যটনের মানচিত্রে এই জেলাটি অনেকটাই উপেক্ষিত ছিল। কিন্তু সময় বদলেছে। রংপুর এখন ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন জোন হিসেবে।রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তাজহাট জমিদার বাড়ি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। ১৯০০ শতকে নির্মিত এই প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মার্বেল পাথরের ফ্লোর, ঝুলন্ত ঝাড়বাতি আর পুরনো নিদর্শন যেন ফিরে নিয়ে যায় উপনিবেশিক আমলের ইতিহাসে।

আরও একটি চিত্তাকর্ষক স্থান হলো রংপুর চিড়িয়াখানা। প্রায় ২১ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে ৩৫টির বেশি প্রজাতির পশু-পাখি। শিশুদের আনন্দের জন্য রয়েছে ছোট্ট ট্রেন ও খেলার ব্যবস্থা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজে যারা আসেন, তাদের জন্য মাহিগঞ্জের বিল কিংবা কাউনিয়ার তিস্তা নদীর পাড় চমৎকার গন্তব্য। শীতকালে তিস্তার বালুচরে দেখ যায় হাজারো অতিথি পাখির মেলা। এছাড়া পীরগাছা উপজেলার জোতদারবাড়ি দীঘি, গঙ্গাচড়ার বাঁশঝাড় ঘেরা পথ এবং বদরগঞ্জের ধানক্ষেতের দৃশ্য আলাদা প্রশান্তি এনে দেয়।
রংপুরের ইতিহাস জানতে হলে ঘুরে আসতে হবে রংপুর টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরিতে। এখানকার লাইব্রেরি ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত, যা দেশের অন্যতম প্রাচীন পাঠাগার।
অবসর ও আনন্দদায়ক সময় কাটাতে শপনপুরী শিশু পার্ক বেশ জনপ্রিয়। কৃত্রিম লেক, পশুপাখির ভাস্কর্য আর নানান রাইড ছোটদের যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি বড়দের কাছেও এটি এক শান্তি ও বিনোদনের জায়গা।
শিল্পপ্রেমীদের জন্য ‘শাতরঞ্জি’ রংপুরের অন্যতম গর্ব। স্থানীয় তাঁতিদের হাতে তৈরি এই নকশাকৃত মাদুর জাতীয় পণ্যটি এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও সমাদৃত। রংপুর শহরের কিছু দোকানে এই শাতরঞ্জির তৈরি পণ্য কেনার পাশাপাশি তৈরি প্রক্রিয়াও সরাসরি দেখার সুযোগ রয়েছে।
রংপুরের পর্যটনে সুবিধা বাড়াতে চালু হচ্ছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ। পাশাপাশি রংপুর-ঢাকা চার লেন মহাসড়ক এবং শহরের অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়ন কাজ চলমান। এসব উন্নয়ন পর্যটকদের ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলবে।
তবে পর্যটনের এই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে দরকার সুসংগঠিত পরিকল্পনা, প্রশিক্ষিত গাইড, নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা ও স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা। রংপুরের একেকটি স্থান যেন একেকটি গল্প,যেখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও মানবিক সংস্কৃতি মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অনন্য রূপ।
বিনিয়োগ, পরিকল্পনা ও প্রচারণা অব্যাহত থাকলে রংপুর একদিন বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন শহরে রূপ নেবে,এ কথা বলাই যায় নির্দ্বিধায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments