নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি অনন্য পর্যটন গন্তব্য। এখানকার প্রকৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি মিলে গড়ে উঠেছে এক অপূর্ব সৌন্দর্য, যা দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের হৃদয়কে সহজেই টানে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য সাতক্ষীরার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ। শ্যামনগর উপজেলার অন্তর্গত এই অংশে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমিরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। সুন্দরবনের পাশে অবস্থিত মন্দারবাড়িয়া সৈকত একটি ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্জন সমুদ্রসৈকত, যা পর্যটকদের কাছে এখনও এক নিভৃত রত্নের মতো।
সাতক্ষীরায় রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা। শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। এটি শক্তিপীঠ হিসেবেও খ্যাত। এছাড়া তালা উপজেলার তেতুলিয়া জামে মসজিদ ও ঈশ্বরীপুরের হাম্মামখানা মুঘল স্থাপত্যের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে।
এই জেলার আরেকটি গর্বের স্থান হলো বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের পৈত্রিক ভিটা, যা তালা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামে অবস্থিত। বাংলা ও ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ এই মনীষীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ইতিহাসপ্রেমী ও শিক্ষানুরাগী দর্শনার্থীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
ইকো-ট্যুরিজমের জন্য সাতক্ষীরা যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ডিসি ইকোপার্ক শিশুদের খেলাধুলা, নৌকা ভ্রমণ এবং বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। অপরদিকে, কালাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার থেকে সহজেই সুন্দরবনের গভীরে প্রবেশ করা যায়। এখানে বনভ্রমণ, পাখি দেখা এবং প্রকৃতির নিস্তব্ধতা উপভোগের সুযোগ রয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী স্থাপনার মধ্যে শ্যামনগরের নাকিপুরে অবস্থিত জমিদার বাড়ি এবং চাইকঘরিয়া গ্রামের জোড়া শিব মন্দির বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব স্থাপনায় টেরাকোটার কারুকাজ এবং পুরাতন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এখনো চোখে পড়ে।
সাতক্ষীরায় পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোটেল ও রিসোর্ট। এখানকার খাবারের মধ্যে সুন্দরবনের খাঁটি মধু, সাতক্ষীরার কুল, দুধের সন্দেশ এবং স্থানীয়ভাবে ধরা টাটকা মাছ পর্যটকদের বিশেষ আনন্দ দেয়।
সব মিলিয়ে সাতক্ষীরা জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে হয়ে উঠেছে, দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা। একটু অবসর পেলেই ঘুরে আসতে পারেন এই নান্দনিক প্রান্ত থেকে। স্মরণীয় হয়ে থাকবে প্রতিটি মুহূর্ত।