নিজস্ব প্রতিবেদকঃবাংলাদেশের নৃগোষ্ঠীগুলো ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে গড়া একটি বৈচিত্র্যময় জাতি, যারা পাহাড় ও সমতলের প্রাণ হয়ে দেশের জাতীয় পরিচয়কে রঙিন করেছে।
বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক, বহুভাষিক ও বহুসংস্কৃতির দেশ। এখানে বাঙালি জাতির পাশাপাশি রয়েছে শতাধিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, যাদের আমরা আদিবাসী বা উপজাতি নামে চিনি। এসব জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও জীবনযাত্রা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অনন্য অধ্যায়। সরকারি হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৫টির মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী স্বীকৃত। তবে গবেষকদের মতে প্রকৃত সংখ্যা ৭৫-৮০টি হতে পারে।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, দেশের আদিবাসী জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ।বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রধানত দুই অঞ্চলে বসবাস করে,পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল অঞ্চল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখো, তঞ্চঙ্গ্যা জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। এরা বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং নিজস্ব ভাষা, পোশাক ও সংস্কৃতিতে গর্বিত।
সমতল অঞ্চলে রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট এলাকায় সাঁওতাল, মুন্ডা, গারো, খাসি, হাজং, কোচ, ওঁরাও, ডালু জাতিগোষ্ঠী বাস করে। এখানে খ্রিস্টান, হিন্দু ও প্রাকৃতিক উপাসনার অনুসারীরা মিলে গড়ে তোলে নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়।
প্রতিটি উপজাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই মৌখিক। চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতাল ও অন্যান্য ভাষা দেশের সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারে অনন্য রঙ যোগ করে। সম্প্রতি ম্রো ভাষায় নির্মিত দেশের প্রথম আদিবাসী চলচ্চিত্র ভাষার সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তাদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, উৎসব, ধর্মীয় রীতি ও জীবনধারা প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। কৃষি, পশুপালন, শিকার ও শিল্পকলায় তাদের দক্ষতা লক্ষণীয়।
তবে তাদের জীবনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিলের অভাব, ভূমি অধিকার নিয়ে বিরোধ, শিক্ষা ও স্বাস্থসেবার ঘাটতি। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি সত্ত্বেও আদিবাসীদের অধিকাংশ দাবি এখনও পূরণ হয়নি।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্য জীবিত রাখতে চেষ্টা হচ্ছে।তাদের মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষায় আমাদের সকলের একসাথে কাজ করা উচিত।