নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন ঝর্ণায় বেড়েছে ভ্রমণপিয়াসুদের ভিড়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এইসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্পটে ভিড় জমে হাজারো মানুষের। তবে আনন্দঘন এই ভ্রমণ অনেক সময় রূপ নিচ্ছে দুর্ঘটনায়। সাম্প্রতিক সময়ে ঝর্ণায় পিছলে পড়ে, পানির গভীরতা না বুঝে ঝাঁপ দিয়ে কিংবা হঠাৎ পাহাড়ি স্রোতে তলিয়ে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাইসহ বিভিন্ন ঝর্ণা এলাকায় একাধিক মৃত্যু ও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই ছবি তোলার নেশায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হবার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার পানিতে লাফ দিচ্ছেন না জেনেই নিচে কি আছে। এই অসতর্কতাই ডেকে আনছে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ।
এই প্রসঙ্গে পর্যটন সচেতনতা কার্যক্রমে জড়িত একজন বলেন, আমরা আনন্দ করতে যাই, কিন্তু নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কেউ আনন্দ পান না। একটা ছবির জন্য যদি জীবনটাই চলে যায়, তবে সেটাকে আনন্দ বলা যায় না। সচেতন না হলে এই দুর্ঘটনাগুলো চলতেই থাকবে।
তিনি জানান, অনেক ঝর্ণা এলাকায় নেই পর্যাপ্ত সাইনবোর্ড, নেই সুরক্ষা ব্যবস্থা। তবে পর্যটকরাও যদি নিজের দায়িত্বটা না বোঝেন, তাহলে কেবল প্রশাসনের পক্ষে কিছু করা সম্ভব না।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক পর্যটক স্থানীয়দের সতর্কতা অবজ্ঞা করে সরাসরি ঝর্ণায় নেমে পড়েন, এমনকি রাত্রি বেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করেন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই এসব দুর্ঘটনা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
ঝর্ণার পাথর খুব পিচ্ছিল, সুতরাং সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।
সাঁতার না জানলে পানিতে নামা উচিত নয়।
পানির গভীরতা না বুঝে লাফ দেওয়া বিপজ্জনক।
পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ বৃষ্টিতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হতে পারে।
গ্রিপযুক্ত জুতা ব্যবহার করলে পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
স্থানীয়দের পরামর্শ ও সতর্কতাকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একদিকে প্রশাসনকে নজরদারি ও জরুরি সেবা বাড়াতে হবে, অন্যদিকে সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মাঝে প্রচারণা চালালেও তা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ধারাবাহিক উদ্যোগ, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা, গণমাধ্যমে প্রচার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্যাম্পেইন।
প্রকৃতি উপভোগ করা মানুষের অধিকার। তবে সেই আনন্দ যেন দায়িত্বহীনতার বলি না হয়। যাতে আর কোনো মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে শুধু স্মৃতি আঁকড়ে না বাঁচেন। আর কোনো পরিবার যেন এমন মৃত্যুসংবাদ না পায়।
এই প্রতিবেদন শুধু একটি খবর নয় বরং একটি অনুরোধ,জীবনকে ভালোবাসুন, ঘুরতে যান সচেতনভাবে।